কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের শোলাকিয়া এলাকায় মৃত নরসুন্দা নদীর তীর ঘেঁষে বিস্তীর্ণ শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। বড় জামাতের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়লে প্রচুর সওয়াব পাওয়া যায়—তাই প্রতিবছর ঈদের সময় দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটে এখানে। ঈদগাহের সৃষ্টির ইতিহাস সন্পর্কে অনেক জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জানা যায় ১৮২৮ সালে এ মাঠের গোড়াপওন হয়। বিখ্যাত এই ঈদগাহ ময়দানের অবস্হান কিশোরগজ্ঞ জেলা শহরের পূর্ব অংশে। প্রায় সাত একর আয়তনের ঈদগাহটি বর্তমান মৃতপ্রায় নরসুন্দা নদীর অববাহিকায় , যে এলাকাটিকে মানুষ শোলাকিয়া নামেই চেনে। জানা যায় ১৮২৮ সালে প্রথম এই ঈদঁগাহে ঈদেঁ জামাত হয়। ওই বছর স্হানীয় (সাহেব বাড়ি ) বর্তমান শোলাকিয়া সাহেব বাড়ির উর্দ্ধতন পুরুষ সৈয়দ আহমদ (রঃ) তার তালুক সম্পত্তিতে তারই ইমামতিতে ঈদেঁর জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ মাঠের নামকরণের বিষয়ে জনশ্রুতি হচ্ছে যে , বহুকাল আগে একবার এ মাঠে ঈদেঁর জামাতে জামাতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাত্ সোয়া লাখ। এই সোয়া লাখ থেকেই উচ্চারণ বিবর্তনে বর্তমান শোলাকিয়ার নামকরণ হয়েছে । অপর একটি ধারণা হচ্ছে , মোগল আমলে এখানে পরগণার রাজস্ব আদায়ের একটি অফিস ছিল। সেই অফিসের অধীন পরগণার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। জনশ্রুতি হচ্ছে , এটাও "শোলাকিয়া" নামকরণের উত্স হতে পারে।
ঐতিহ্যবাহী ঈদঁগাহটি ১৮২৮ খ্রিঃ থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে উপমহাদেশের সবচেয়ে বৃহত্ ঈদ জামাতের মাঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। প্রতি ঈদের জামাতে এ মাঠে তিন লাখের বেশি মানুষ নামাজ আদায় করেন। মাঠের ভেতরে ২৬৫ টি কাতার রয়েছে। কিন্ত স্হান সংকুলান না হওয়ায় মাঠ ছাড়িয়ে মুসল্লিগন ঈদগাহ সড়ক ,পার্শ্ববর্তী কুমুদীনি স্কুল মাঠ ,নরসুন্দা নদী অপর পারে কিশোরগঞ্ছ-করিমগঞ্ছ সড়কের ওপর , বাড়ির উঠান ,বাসার ছাদ এবং নিকঠবর্তী এলাকায় নামাজে অংশ নেন। এ মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী দফায় দফায় শটগানের গুলি ছোড়া হয় আকাশে। জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি , ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছোড়ার মাধ্যমে সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার সংকেত দেওয়া হয়। নামাজ শেষে দেশ , জাতি ও মুসলিম উন্মাহর জন্য মঙ্গল কামনা করে মুনাজাত পরিচালিত হয়। লাখো লাখো আবাল বৃদ্বা বনিতার "আমিন আমিন" রবে মুখরিত হয়ে ওঠে ঈদগাহ ময়দান।
0 comments:
Post a Comment